সুতরাং একজন প্রার্থীকে প্রথমে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তারপর ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় বেশ ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষায় একটু ভালো করতে পারলে চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তি সম্ভব হবে।
পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে প্রার্থীদেরকে বেশ দীর্ঘ একটা সময় দেয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৫-৬ মাস পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আরও ৫-৬ মাস পরে লিখিত পরীক্ষা এবং লিখিত পরীক্ষার ৬-৮ মাস পরে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়টুকুর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একজন প্রার্থী তার প্রতিযোগীদের তুলনায় এগিয়ে থাকতে পারেন।
পরীক্ষার প্রশ্নের ধরণঃ
১। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাঃ মোট ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষাটি প্রধানত পাঁচটি বিষয়ের ওপরে অনুষ্ঠিত হয় যথা-
• ইংরেজি – ২৫ নম্বর
• গণিত ও মানসিক দক্ষতা – ৩০ নম্বর
• বাংলা – ২০ নম্বর
• সাধারন জ্ঞান – ১৫ নম্বর
• কম্পিউটার জ্ঞান – ১০ নম্বর
প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য প্রার্থী ১ নম্বর করে পাবেন এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য অর্জিত নম্বর থেকে ০.২৫ নম্বর করে কেটে নেয়া হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট নম্বর বিবেচনা করা হয়। সুতরাং এ পরীক্ষায় প্রার্থীকে আলাদাভাবে প্রতিটি বিষয়ে পাশ করতে হয় না। পরীক্ষার পাশ নম্বর আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা থাকে না। সাধারনত সেরা ৮-১০ হাজার স্কোরধারীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ করা হয়। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৫৫+ নম্বর রাখতে পারলে লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হওয়া যায়। যেহেতু এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটুকুই গুরুত্বপূর্ণ তাই প্রস্তুতি নেয়ার সময় প্রার্থী পুরো ১০০ নম্বরের প্রস্তুতি না নিয়ে ৭০-৮০ নম্বরের জন্য ভালোমত প্রস্তুতি নিতে পারেন।
২। লিখিত পরীক্ষাঃ মোট ২০০ নম্বরের একটি বর্ণনামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন আসে তা হল-
• Focus Writing in English – 30 marks
• Creative Writing in English – 30 marks
• Reading Comprehension – 20 marks
• English to Bangla Translation – 20 marks
• Bangla to English Translation – 20 marks
• বাংলা প্রবন্ধ রচনা – ৩০ নম্বর
• গাণিতিক সমস্যা সমাধান – ৫০ নম্বর
গাণিতিক সমস্যা সমাধান অংশের নম্বর একটু কমিয়ে দিয়ে অন্য কোনো প্রশ্নও দেয়া হতে পারে। যেমন ২০১৭ সালের পরীক্ষাতে গাণিতিক সমস্যা অংশে ৩০ নম্বর বরাদ্দ রেখে বাকি ২০ নম্বরের একটি Analytical Puzzle দিয়েছিল।
চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিখিত পরীক্ষার নম্বরের সাথে মৌখিক পরীক্ষার ২৫ নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত স্কোর হিসাব করা হয়। যেহেতু মৌখিক পরীক্ষায় গড়ে ১৬-২২ এর মধ্যে নম্বর পাওয়া যায়, লিখিত পরীক্ষার স্কোরই অন্য প্রার্থীদের সাথে আপনার পার্থক্য গড়ে দিতে পারবে। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলোতে আলাদা আলাদা ভাবে পাশ করতে হবে না, সামগ্রিক স্কোরের ভিত্তিতে প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচনা করা হবে। ২০০ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১১৬-১২০ নম্বর পেয়েও বিগত সালগুলোতে প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন, তবে ১৪০-১৬০ নম্বরকে সেফ জোন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৩। মৌখিক পরীক্ষাঃ চূড়ান্ত নিয়োগের পথে শেষ ধাপ হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, একজন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, এইচআরডির একজন জিএম বা ডিজিএম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর- এই চারজন দ্বারা গঠিত বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে। বোর্ড সাধারনত কয়েকটি বিষয়ে প্রার্থীকে প্রশ্ন করে থাকে যথা-
• প্রার্থীর ব্যক্তিগত বিষয়াবলী, পারিবারিক বৃত্তান্ত, নিজ জেলা বা এলাকা সম্পর্কে খুঁটিনাটি,
• প্রার্থীর academic background থেকে basic কিছু প্রশ্ন এবং এসব প্রশ্ন ধরে কিছু critical প্রশ্ন,
• জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কিছু প্রশ্ন,
• বিভিন্ন ব্যাংকিং terms, ব্যাংক সম্পর্কে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা,
• প্রার্থী কেন বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দিতে ইচ্ছুক, তার গ্রাজুয়েশন সাবজেক্ট কিভাবে এই পেশার সাথে সম্পর্কিত বা কিভাবে তার গ্রাজুয়েশন সাবজেক্টের জ্ঞান তাকে এই পেশায় কাজ করতে সহায়তা করবে ইত্যাদি।
মৌখিক পরীক্ষায় মোট ২৫ নম্বরের মধ্যে পাশ নম্বর ১৫। প্রশ্ন করার পাশাপাশি বোর্ড একজন প্রার্থীর শব্দচয়ন, বাচনভঙ্গি, বিভিন্ন ইস্যুতে তার দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি নানা দিকেও লক্ষ্য রাখেন।
পরীক্ষার জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করতে হবে?
১। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাঃ
ইতোমধ্যে বলা হয়েছে মোট পাঁচটি বিষয়ের ওপরে এ পরীক্ষাটা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির একটি সাধারণ নির্দেশনা নিম্নে দেয়া হলঃ-
ইংরেজীঃ এ অংশে সাধারণত যেসব প্রশ্ন আসে তা হল- Choose similar word, opposite word, odd word, Fill in the blanks, Right form of verb, Sentence Correction, Pin Point Error Detection, Appropriate Preposition, Phrases & Idioms ইত্যাদি। এ অংশের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে প্রার্থীকে একাধারে প্রচুর শব্দ মূখস্থ করতে হবে এবং ইংরেজী গ্রামারের খুটিনাটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। বিগত বছরের পরীক্ষার ইংরেজী অংশের প্রশ্ন সল্ভ করার পাশাপাশি কিছু ভালো বই কিনে নিয়মিত অধ্যয়ন করলে এ বিষয়ে একটা ভালো প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব।
বাংলাঃ এ অংশে বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী ও সাহিত্যকর্ম এবং বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী পড়ার ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের পাঠক্রমে যাঁদের সাহিত্যকর্ম অন্তর্ভূক্ত আছে, তাদেরটা ভালোভাবে পড়তে হবে। অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণের বোর্ড বইকে আদর্শ ধরে ব্যাকরণ অংশের প্রস্তুতি নিতে হবে।
গণিতঃ এ অংশেই যেহেতু সর্বাপেক্ষা বেশি নম্বর বরাদ্দ থাকে, সেহেতু এই অংশের প্রস্তুতিটা একটু বেশি যত্নের সাথে নিতে হবে। গণিত অংশে মূলতঃ Time-Distance-Speed: Boat & Stream, Train, Race, Time & Work, Pipe & Cistern, Average, Percentage-Interest, Equation-Age-Partnership-Ratio, Set-Venn Diagram ইত্যাদি বিষয়ের ওপরে প্রশ্ন হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন অনুশীলনের পাশাপাশি একটি ভালো বই থেকে চ্যাপ্টার ধরে ধরে ওপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারলে পরীক্ষার হলে সবগুলো ম্যাথ সঠিকভাবে করা সম্ভব হবে।
সাধারণ জ্ঞানঃ সাধারণ জ্ঞানে সাধারণত দুই ধরণের প্রশ্ন আসে – ফিক্সড সাধারণ জ্ঞান, চলতি বিশ্বের বিষয়াবলি। ফিক্সড ব্যাপারটা হলো এমন সব বিষয় যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় না। যেমন- বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে? –এই প্রশ্নটির উত্তর আজও যা, ১০-২০ বছর পরেও তা-ই থাকবে। এর কোনো পরিবর্তন হবে না। বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন ঘেটে ঘেটে ফিক্সড টাইপের সাধারণ জ্ঞানের একটি তালিকা করে নিয়ে ঐ ধরণের বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়লে সাধারণ জ্ঞানের অর্ধেকটার ওপরে প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে চলতি বিশ্বের বিষয়াবলির ওপরে যেসব প্রশ্ন হয়, তা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয় বা হতে পারে। যেমন, Asian Clearing Union এর চেয়ারম্যান কে? –এই প্রশ্নটির উত্তর অনেকদিন ধরে ছিল ড. আতিউর রহমান এর পরে কিছুদিন ছিল জনাব ফজলে কবির। কিন্তু বর্তমানে কে? –তার আপডেটও আপনার জানা থাকতে হবে। কিছু তথ্য আছে প্রতি মাসে আপডেট হয়, কিছু তথ্য ৩ মাসে, ৬ মাসে, ১ বছরে কিংবা ৩/৪ বছর পর পর আপডেট হয়। এসব তথ্যের জন্য একটি রেজিস্টার খাতা maintain করুন। তথ্যগুলো খাতায় লিখে এর পাশে পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন। যখনই কোনো তথ্য পরিবর্তিত হবে আগের তথ্যটি কেটে দিয়ে নতুন তথ্যটি লিখে রাখুন। সংবাদপত্র, টিভি নিউজ, কারেন্ট এফেয়ার্স ইত্যাদি বই থেকে আপনি আপডেটেড তথ্য পেতে পারেন।
কম্পিউটার জ্ঞানঃ কম্পিউটার জ্ঞান অংশে কম্পিউটারের কিছু অতি সাধারণ জ্ঞান থেকে শুরু করে কিছুটা কঠিন প্রশ্নও হতে দেখা যায়। System & Application Software, Anti-virus, Office Programs, Database, Networking, Hardware, File Type & Extension, Internet-website-web address ইত্যাদি বিষয়ের ওপরে কম্পিউটারের প্রশ্ন হয়। কম্পিউটার জ্ঞান অংশের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর পাশাপাশি ওপরে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ওপরে ভালোমত পড়াশোনা করতে হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যাবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১০০টি প্রশ্ন উত্তর করতে আপনাকে ৬০ মিনিট সময় দেয়া হবে। এই ৬০ মিনিটের কমপক্ষে ২-৩ মিনিট ব্যয় হবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও আপনার খাতায় ইনভিজিলেটরের স্বাক্ষর নিতে। তাই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য ৩০ সেকেন্ড করেই বরাদ্দ রাখুন। তবে সকল প্রশ্ন উত্তর করতে এই ৩০ সেকেন্ড ব্যয় করা যাবে না। যেমন, একটি সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন পড়তে লাগবে ৫ সেকেন্ড, উত্তরটি দেখে বৃত্ত ভরাট করতে লাগবে আরো ৫ সেকেন্ড। এভাবে একটি প্রশ্ন থেকে ২০ সেকেন্ড বাঁচিয়ে আপনি তা একিট গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বরাদ্দকৃত ৩০ সেকেন্ডের সাথে যোগ করে নিতে পারেন। যেসব প্রশ্ন পড়েই বুঝবেন যে আপনি এর উত্তর পারেন না, ওগুলোর জন্য শুধু শুধু সময় নষ্ট করবেন না। দ্রুত ঐ প্রশ্নটি ছেড়ে অন্য প্রশ্নে চলে যেতে হবে।
পরীক্ষার হলে প্রবেশের পূর্বে ব্রেনকে দিয়ে হালকা কাজ করিয়ে নিন। এক্ষেত্রে একটা কার্যকর পদ্ধতি হলো মোবাইলে পাজল গেম খেলা। এছাড়া পরীক্ষার পূর্বে পরিমিত পরিমানে খাবার খেয়ে নিন। অধিক খেয়ে হাসফাস কিংবা না খেয়ে ক্ষুধার কষ্ট নিয়ে আপনি ভালো পরীক্ষা দিতে পারবেন না। পারলে কয়েকটি বাদাম কিংবা হালকা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়ে নিন।
২। লিখিত পরীক্ষাঃ
লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির শুরুতেই কয়েকটি বিষয় আয়ত্ব করতে হবে:-
ক. পরিষ্কার ও সুন্দর হাতের লেখা রপ্ত করতে হবে
খ. খাতায় সুন্দর ও পরিপাটি presentation রাখতে হবে।
গ. শুদ্ধ বানান ও grammar আয়ত্ব করতে হবে।
ঘ. To the point এ লেখা শিখতে হবে।
পরিষ্কার ও সুন্দর হাতের লেখা এবং খাতায় সুন্দর ও পরিপাটি presentation- একটি অপরটির সাথে জড়িত। আপনার খাতার Look-টা যদি সুন্দর ও পরিপাটি হয়, তবে খাতা মূল্যায়নের সময় মূল্যায়নকারী সন্তুষ্ট থাকবেন এবং আপনাকে বেশি নম্বর দিতে চেষ্টা করবেন। তবে এই দুটি বিষয়ই সব না। আপনাকে লেখার শুদ্ধতা ও প্রাসঙ্গিকতার দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় আপনাকে কম/বেশি দশ হাজার প্রতিযোগীকে টপকিয়ে সেরা ২০০ এর মধ্যে স্থান করে নিতে হবে। তাই আপনার দিক থেকে আপনাকে সেরাটা দিতেই হবে। আর লেখার জন্য যেহেতু খুবই কম জায়গা দেয়া হয়, সেহেতু আপনাকে to the point এ লেখা শিখতে হবে। একটি রচনার জন্য ২৫ নম্বর – এটা দেখেই ১০-১৫ পাতা লেখার প্ল্যান করবেন না যেন।
লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে আপনাকে দীর্ঘদিন অনুশীলন করতে হবে। Focus Writing in English, বাংলায় রচনা লেখা – এই দুটি লেখার প্রতিটির জন্য দুই থেকে আড়াই পৃষ্ঠা করে বরাদ্দ রাখুন। এই লেখায় ভালো করতে আপনাকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে এবং একই সাথে আপনার জানা বিষয়গুলো গুছিয়ে ধারাবাহিকভাবে আপনার লেখায় উপস্থাপন করতে হবে। কী কী বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, তা জানতে প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়ুন এবং এর পাশাপাশি দুটি টিভি চ্যানেলের রাতের খবর দেখুন। যেসব বিষয়ের ওপরে পরপর দু-তিন দিন রিপোর্ট আসবে, ওগুলো অবশ্যই মার্ক করে রাখুন। মার্ক করা বিষয়গুলোর ওপরে ইন্টারনেট কিংবা সংবাদপত্র ঘেঁটে একটা data summary তৈরি করুন এবং প্রতিদিন ঐ data summary দেখে তিন পৃষ্ঠার একটি complete রচনা লেখার চেষ্টা করুন। নিজের লেখা নিজেই মূল্যায়ন করুন। সম্ভব হলে অন্যদের সাথে লেখাটা শেয়ার করুন, পরামর্শ নিন ও লেখার মান উন্নত করুন।
Creative Writing অংশে আপনাকে চিঠি, দরখাস্ত, ডায়ালগ, প্রতিবেদন কিংবা একটি সাধারণ রচনা লিখতে দেয়া হবে যেখানে আপনার চিন্তা-ভাবনার একটা ছাপ রাখার সুযোগ দেয়া হবে। এই অংশে ভালো করতে হলে আপনাকে চিঠি, দরখাস্ত, ডায়ালগ, প্রতিবেদন ইত্যাদির standard format সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। কোনো বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে লিখতে দিলে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি উপস্থাপন করে এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দিতে হবে এবং শেষে আপনার মতামত যুক্তিসহ তুলে ধরতে হবে।
Written Math-এ কয়েকটি গাণিতিক সমস্যা বিস্তারিতভাবে সমাধান করে দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে স্কুল লেভেলে আমরা যেভাবে ম্যাথের উত্তর করতাম ওভাবে করলেই হবে। প্রয়োজনে চিত্র আঙ্কন করতে হবে।
Reading Comprehension অংশে একটি লেখা দেয়া থাকবে এবং এর ভিত্তিতে ৫-৬টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকবে যার সবগুলোর উত্তর লেখার জন্য এক থেকে দেড় পৃষ্ঠা স্পেস পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সাধারণত যা দেখা যায় তা হল- passage-টি কিছু কঠিন শব্দ ব্যবহার করে অনেক বড় বড় বাক্যে রচিত হয়ে থাকে। আর passage-এর size একটু বড় থাকে। ফলে লেখাটার শুরু থেকে একবার পড়ে শেষ অংশে পৌছাতে পৌছাতে আপনি এর অনেক অংশই ভুলে যাবেন। এর পরে প্রশ্ন পড়তে পড়তে আপনার মাথাটা পুরোপুরি blank-ও হয়ে যেতে পারে। তাই শুরুতেই প্রশ্নগুলো পড়ে নিন। এরপরে হালকাভাবে passage এ চোখ বুলাতে শুরু করুন। প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ামাত্র তা মার্ক করে রাখুন। উত্তরটা নিজের ভাষায় গুছিয়ে লিখবেন, passage এর কথা সরাসরি কপি করবেন না।
English to Bangla & Bangla to English Translation এই দুটি অংশে ভালো করতে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় ও মতামতগুলো অনুবাদের অনুশীলন করুন। কিছু পত্রিকা আছে যাদের অনলাইন ভার্সনটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই available থাকে। শুরুর দিকে ঐ পত্রিকাগুলো থেকে practice করা যেতে পারে।
Analytical Puzzle যদি আসে তবে শুরুতে যুক্তি উপস্থাপন করে ঐ যুক্তির ভিত্তিতে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। অন্য কোথাও রাফ করে উত্তর লেখার স্থানে শুধুমাত্র উত্তর লিখলে নম্বর পাওয়া যাবে না। বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর বইয়ে analytical puzzle নিয়ে ব্যাপক আলোচনা পাবেন। ভালো দেখে একটি বই কিনে কিছুদিন নিয়মিত অনুশীলন করলে এ বিষয়ে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
৩। মৌখিক পরীক্ষাঃ
প্রথম পর্বেই মৌখিক পরীক্ষার বিস্তারিত বলেছি। নিজের academic background এর বেসিক বিষয়গুলোর তালিকা করে ওগুলো সম্পর্কে ভালোমত পড়াশোনা করুন। আপনার সাবজেক্ট থেকে কোনো প্রশ্ন করা হলে আপনি যদি তার সঠিক উত্তর না দিতে পারেন তবে বোর্ডে আপনার একটা bad impression তৈরি হবে এবং তা অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তরের ওপরেও প্রভাব ফেলবে। Recent business, banking & economic issues ও banking terms সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে পত্রিকার অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য পাতা দুটি নিয়মিত পড়ুন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে Monetary Policy Statement, Monthly Economic Trends, Selected Indicators, Quarterly Review, Scheduled Banks Statistics ইত্যাদি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় যা ব্যাংকের ওয়েব সাইটে নিয়মিতভাবে আপলোড করা হয়। ওগুলো নিয়মিতভাবে পড়লে আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম ও দেশের ব্যাংকিং সেক্টর সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবেন।
লেখক: সুলতান মাহ্মুদ, সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।